ছড়া-কবিতা
চাঁদের কাছাকাছি
শ্যামলকান্তি দাশ
আমি যে বাড়ি নেই, আমি যে বাড়ি নেই,
গাইছ কেন অত, নাচছ ধেই ধেই !
কেন যে দরজায় নাড়ছ অত কড়া,
হয়নি মালপোয়া, হয়নি দইবড়া।
এখনো মাঠ ভেজা, চতুর্দিকে জল,
অযথা রাস্তায় খেলছো ফুটবল।
আমি যে আকাশের নিরালা এক কোণে,
দেখছি তোমাদের, খুঁজছি মনে মনে।
খুঁজছি ছোটো নদী, খুঁজছি জুইফুল,
খুঁজছি তোমাদের নতুন ইসকুল।
খুঁজছি ব্যাগভরা সাজানো বইখাতা
খুঁজছি আমাদের পুরনো কলকাতা।
কী মজা মেঘে মেঘে যাচ্ছ বহুদূর,
হাওয়াই জাহাজে কুয়ালালামপুর।
আমার ছুটি শেষ, আমি তো বাড়ি আছি,
আস্ত একখানা চাঁদের কাছাকাছি!
হারানো সে দিনগুলি
উৎপলকুমার ধারা
আলপথটির দুইপাশেতে ফুলফোটা একরাশ
ওই ছেলে সেই পথটিকে আর দেখতে কি তুই পাস
এখন তো তোর শহরের বুকে ঝাঁ চকচকে বাড়ি
তাই বুঝি তোর জন্মভিটের গ্রামের সঙ্গে আড়ি ?
আমার ছিল বিকেলবেলার মস্ত খেলার মাঠ
আমার ছিল শালুকপুকুর সাঁতার কাটার ঘাট
আমার ছিল বিরাট আকাশ রঙ কাগজের ঘুড়ি
আমার ছিল চাঁদের পিঠে চরকা কাটা বুড়ি ।
খেলার মাঠটি উধাও এখন হারিয়েছে সব খেলা
ফ্ল্যাটবাড়িতে গুমরে কাঁদে মিঠেল ছোট্টবেলা
মনখারাপের ছোট্টকোটরে বন্ধুবিহীন একা
মোবাইল ফোন আঁকড়ে সদাই বুঁদ হয়ে বসে থাকা।
বইয়ের মস্ত ব্যাগটিকে তুই বইছিস মুখ বুজে
সেই হারানো দিন জানি তোরা আর পাবিনা খুঁজে
তবুও আজো সে-দিনগুলির অপেক্ষাতে থাকি
হারিয়ে যাওয়া সুখগুলোকে পদ্য-ছড়ায় আঁকি ।।
মায়াবী হেমন্ত
শঙ্খশুভ্র পাত্র
নতুন ধানের ঘ্রাণে আমোদিত চারিদিক।
বন্ধুকে চিঠি লিখি–শুভেচ্ছা হার্দিক।
হেমন্তে শিশির মাখা–কুয়াশার গল্প
আশা করে শুনবে কে? শীতটা যে অল্প!
ফাঁকা মাঠে হাওয়া খেলে–ভরপুর চিত্ত,
তিলফুলে প্রজাপতি শুরু করে নৃত্য।
হিমঋতু দেখে ভীতু কেউ হয় কখনো?
আমি তো দেখছি শুধু কবিতার স্বপ্ন।
বন্ধুকে চিঠি লিখে ভেবে ভেবেছি এমন তো
বাড়ি এলে তাকে দেব মায়াবী হেমন্ত।
ফোঁটা
শ্যামাচরণ কর্মকার
ছোট্ট কিন্তু নগণ্য নয়
নয় সে মূল্যহীন
ভাই-বোন তাই ভাবে, কবে
আসবে ফোঁটার দিন?
বোনের হাতের ছোট্ট ফোঁটাই
ভাইয়ের অনেক পাওয়া
সারা বছর অপেক্ষা তাই
ফোঁটার পথ চাওয়া।
উপসী বোন, খুব খুশি মন
ভাইকে দেবে ফোঁটা
দুব্বো তোলে, মিঠাই আনে
সকাল থেকে ছোটা।
শুনছ, ও মা, চন্দন কই?
কোথায় আছে ধান?
ভাইকে বসায় আসন পেতে
বুকে খুশির বান।
ভাইয়ের মুখে মিষ্টি হাসি,
হাসি বোনের মুখে-
এই ফোঁটা হোক রক্ষাকবচ
ভাইটি থাকুক সুখে।
ফোঁটার দিনে কারোর হাসি,
কারোর চোখে জল
বোনের যদি ভাই না থাকে
দুঃখই সম্বল।
ভাইয়ের যদি বোন না থাকে
সেও তো পাবে দুখ
কে দেবে এই ভাইকে ফোঁটা?
থাকবে হাসিমুখ?
ভাইও থাকুক,বোনও থাকুক
হোক খুশি ভাই-বোন
ফোঁটার দিনে কারোর যেন
না পুড়ে যায় মন!
শালিকের সভা
কণিকা দাস
একটা শালিক সকালবেলায়
শিশির ভেজা ঘাসে
এদিক ওদিক হাঁটছিল আর
দেখছিল কে আসে।
এলো আরো তিনটে শালিক
জুড়ে গেল সাথে
মুখের কাছে মুখ মিলিয়ে
কথার মালা গাঁথে।
খানিক পরে সভা শেষে
এদিক ওদিক ঘুরে
ঘাসের উপর খোঁজে খাবার
ঠোঁটে মাটি খুঁড়ে।
টুনুর হাতে ফোনটা ছিল
ক্যামেরাটা খুলে
টপ টপাটপ ক্লিক করে সে
ছবি নিল তুলে।
শালিক তখন রেগে মেগে
করলো তাকে তাড়া
ছুটলো টুনু গেটের দিকে
মা বলে তুই দাঁড়া।
টুনু দেখে পিছন ফিরে
শালিক গেল উড়ে
ভয় পেয়েছে ওরা যে তাই
বসল গিয়ে দূরে।
পুপুলের স্বপ্ন
মাধবী মিত্র
ঘুমের মধ্যে সেদিন পুপুল
স্বপ্নে উঠে দ্যাখে
অঙ্ককষার খাতাটা তার
ছিল বইয়ের র্যাকে।
সেই খাতাটা খুলে বসে
নেংটি ইঁদুরছানা
চশমা এঁটে নাকের ওপর
কষছে অঙ্কখানা।
চুপিচুপি খাতাটা যেই
দেখতে গেছে খুলে
অঙ্কটা তার ঠিক করেছে
নাকি ভরা ভুলে!
নেংটি অমনি রেগেমেগে
কুচিকুচি দাঁতে
কুটুস করে কামড়ে দিল
পুপুলেরই হাতে।
স্বপ্ন ভেঙে জেগে পুপুল
দেখল চারিপাশে
নেংটি কোথায়? দেয়নি কামড়
স্বপ্ন চোখে ভাসে।
পাঠকদের মন্তব্য
250