ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্প শুধু গল্প নয় / জুলাই ২০২৫

প্রমিস

‌‌ “আমার টিফিনবক্সটা কোথায় গেল, টিফিনবক্স…!” 

 টিফিনব্রেকে এই কথা বলতে বলতে চতুর্থ শ্রেণির টিয়া কান্নাকাটি শুরু করে। ইতিমধ্যে ওর ক্লাসের অনেক বন্ধুবান্ধব ক্লাসের বাইরে গিয়ে মিডডে মিল খাওয়া শুরু করেছে। যারা খাবে না বা বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে এসেছে, তারা ক্লাসের মধ্যেই এদিক-সেদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে টিফিনব্রেকের আনন্দ উপভোগ করছিল। টিয়ার কান্না শুনে সবাই ছুটে আসে। 

টিয়ার কাছের বন্ধু দিয়াও ওর টিফিন খাওয়া বন্ধ করে টিয়ার কাছে ছুটে আসে। 

 “কাঁদছিস কেন?” দিয়া জিজ্ঞেস করতেই টিয়া বলে, “আমার টিফিনবক্স বের করে ব্যাগের পাশেই রেখেছিলাম। কোথায় গেল, খুঁজে পাচ্ছি না!”

দিয়ার সঙ্গে অন্যান্য বন্ধুরাও টিয়ার টিফিনবক্স খোঁজাখুঁজি শুরু করে। 

 …নাহ! কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না টিফিনবক্স। তবে টিয়ার পেছনে বসা বন্ধু কিঙ্কর টিফিন-পিরিয়ডের আগে ওর টিফিনবক্সটা খুলে দেখে বলেছিল,“আজকের টিফিন স্পেশাল হবে!”

সঙ্গে সঙ্গে টিয়া‌ ছোঁ মেরে টিফিনবক্সটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে ব্যাগের আড়ালে রাখে। সে কথা বন্ধু দিয়াকে বলতেই সে বলল, “কিঙ্কর তো ভাত খেতে গেল। ও কী করে নেবে? তাছাড়া, ও খুব ভালো। চুরিটুরি করে না।”

 

“চল্ তো বাইরে গিয়ে আমাদের ক্লাসের পেছনটা দেখি”–টিয়া বলল। 

তিন-চারটে বন্ধু মিলে ওদের ক্লাসরুমের পেছনে স্কুলের সবজি-বাগানের ভেতরে ঢুকলো। এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে দেখে, টিয়ার টিফিনবাক্সের ঢাকনাটা পড়ে রয়েছে। তারপরেই ছোটো ছোটো পায়ের ছাপ। বেড়ালের পায়ের ছাপ মনে হচ্ছে। পায়ের ছাপ ধরে ধরে এগিয়ে যেতে যেতে ওরা দেখে, একটা বেগুন গাছে অনেক ক’টা লম্বা লম্বা কালো বেগুন ঝুলে রয়েছে। বেগুনের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রায় কালো বেগুনের মতো রঙের একটা বিড়াল শুয়ে রয়েছে। আরো কাছে যেতে দেখে, বিড়ালের মুখের কাছে ফাঁকা টিফিনবক্সটা পড়ে রয়েছে। 

 

টিয়া ‘হেই’ করতেই বিড়ালটা ধড়মড়িয়ে উঠে পালালো। 

“সেকি! এই বিড়ালটাই তো কালকে আমাদের বাড়ির দরজার সামনে শুয়ে ছিল। আমি একটা লাঠি নিয়ে একটু পিটুনি দিতেই ছুটে পালালো। মা শব্দ শুনে ছুটে এসে আমাকে বকাঝকা করতে শুরু করল। মা বলল, তুই স্কুল যাওয়ার পরে দুপুর হলেই ও প্রতিদিন আসে। আমি ওকে পরোটা বানিয়ে খাওয়াই। তারপর ওর জন্য রাখা বাটিতে একটু দুধ দিলে, চুকচুক করে খেয়ে চলে যায়।‌ পরেরদিন আবার আসে। তুই ওকে মেরে তাড়িয়ে দিলি? একদম ঠিক করিসনি। খুব অন্যায় করেছিস অবলা প্রাণীকে মেরে…!”–বলে টিয়া।

 

“সেদিন মা পোলাও রান্না করেছিল। কালো বিড়ালটা পোলাও খেতে খুব ভালোবাসে। মা সেদিন পোলাও রান্না করে, আমার টিফিনবক্সে ভরে দেওয়ার পর ওর জন্যও রেখে দিয়েছিল। কিন্তু বিড়ালটা আমার পিটুনির জন্য পোলাও না খেয়েই পালিয়েছিল। আজকেও মা আমাকে পোলাও রান্না করে টিফিনবক্সে ভরে দিয়েছিল। আমার পোলাওটা আজ খেয়ে নিল ও।”–এ পর্যন্ত বলে টিয়া চুপ হয়ে গেল।

ওদের ক্লাসের বুদ্ধিমতী দিয়া, বিজ্ঞের মতো বলল, “ভগবান ওকে পাঠিয়েছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তুই ওকে মেরেছিলি। ও মনে হয় ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। সেজন্যই তো বাবা-মা বলে, অবলা প্রাণীকে মারতে নেই।”

 

   “তুই ঠিকই বলেছিস দিয়া। আমি সেদিন ওকে খুব জোরেই মেরেছিলাম। সেদিন চার পিরিয়ডে স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। দুপুরে আমাদের যেমন খাবার সময়, ওরও খাবার সময় হয়েছিল। ওরও তো আমাদের মতো খিদে পেয়েছিল বল? আমার পিটুনি খেয়ে ও খুব কষ্ট পেয়েছিল। আমরা অকারণে অবলা প্রাণীদের মারি। ওদের কষ্টের কথা একদম ভাবি না। অনেক সময় বাবা-মা বকলেও আমরা বাবা-মায়ের কথায় কান দিই না..! আমার খুব খারাপ লাগছে ! ও আজ আমার পোলাও খেয়েছে, আমি খুব খুশি রে। খুব খুশি। আর কখনো কোনো প্রাণীকে মারবো না…প্রমিস!”


পাঠকদের মন্তব্য

তনুজা চক্রবর্তী লিখেছেন... ১৪ই জুলাই, ২০২৫
শিক্ষামূলক মিষ্টি গল্প।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up