ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্পগাথা / মার্চ ২০২৫

টুনটুনি আর বুলবুলি

একটা ছোট্ট টুনটুনি পাখি ছিল, সে তার মায়ের সঙ্গে বাসায় থাকত। মা রোজ সক্কালবেলায় বেরিয়ে যেত খাবার সংগ্রহ করবার জন্য। টুনটুনি একা একা বসে থাকত আর ভাবত, ‘কখন মা আসবে? আমাকে খাইয়ে দেবে’!

      টুনটুনি একদিন উড়তে শিখল, কিন্তু কিছু দূর উড়লেই তার ছোট্ট ডানায় ব্যথা লাগে। তাই সে একটা গাছের এ-ডাল ও-ডাল উড়ে বেড়ায়। তাতেই তার আনন্দ। সে ঠিক করল, ‘বড় হলে আমি অনেক দূরে উড়ে যাব'।

   একদিন টুনটুনির মা বাইরে গেছে। টুনটুনি সেই ফাঁকে উড়তে লাগল। আশ্চর্য ব্যাপার তো! আজ আর ডানাতে ব্যথা লাগছে না! টুনটুনি এ-গাছ ও-গাছ করতে শুরু করল। সে কি মজা তা তো বলে বোঝানো যাবে না। কত রকমের গাছ! কত রঙের ফুল!

 

      নতুন জগৎ দেখে টুনটুনি রাস্তা হারিয়ে ফেলল। বাসাতে কি করে পৌঁছাবে বুঝে উঠতে পারল না। এদিকে আলো কমে আসছে, মা ফিরে যাবে। কি হবে ভেবে টুনটুনির চোখে জল এসে গেল। একটা ডালে বসে সে চারিদিকে দেখতে লাগল।

    এমন সময় চোখে পড়ল একটি বাসা। আশার আলো দেখে টুনটুনি সেই বাসায় উপস্থিত হলো। কিন্তু না—এ তো তাদের বাসা নয়। বেল দিতেই বেরিয়ে এল ছোট্ট একটি পাখি। হাসিমুখে এসেছিল, কিন্তু, টুনটুনিকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে ?”

     টুনটুনি ভাবতেও পারেনি, তাকে দেখে কেউ ঘাবড়াতে পারে। সে বলল, “আমার নাম টুনটুনি, তুমি কে?” সে আধো গলায় উত্তর দিল, “আমি বুলবুলি।”

    টুনটুনি দিদিগিরি বেশিক্ষণ দেখাতে পারল না। ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। বলল, “দেখো না উড়তে উড়তে কোথায় চলে এসেছি, আর বাড়ি ফিরতে পারছি না।”

      বুলবুলি টুনটুনিকে বাসাতে ডেকে বসালো। আদর করল, টুনটুনি চোখ মুছে বলল, “তুমি আমার সাথে আসবে? আমার বাসা খুঁজবে? আমার মা ফিরে এলে যে খুব চিন্তা করবে!”

    বুলবুলির মুখ ছোটো হয়ে গেল। সে মিনমিন করে বলল, “আমি তো উড়তে জানি না।” সত্যিই তার ডানাগুলো খুব ছোটো।

    টুনটুনির প্রশ্ন, “তোমার মা কোথায়?”

    এবার বুলবুলি বেশ গুছিয়ে উত্তর দিলো, “আমার মা আমার জন্য খাবার আনতে গেছে। তুমি বসো। মা ফিরে এলে তোমার বাসা খুঁজে দেবে। আমার মা খুব ভালো।”

 

      ওরা বসে বসে গল্প করতে লাগল। আস্তে আস্তে ওদের খেলা জমে উঠল। এমন সময় বুলবুলির মা ফিরল। বুলবুলি উত্তেজিত হয়ে বলল, “মা! মা! ও হল টুনটুনি।” এরপর বুলবুলি টুনটুনির সব কিছু খুলে বলল।

      সারাদিন খাটাখাটনির পর বুলবুলির মা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু টুনটুনির এই বিপদ দেখে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “বাসার ঠিকানা জানো?”

 টুনটুনি শুকনো মুখে বলল, “না।”

     এরপর বুলবুলির মা দুজনকে যত্ন করে খাওয়ালো এবং দু’জনকে পিঠে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ‘পাখি পুলিশ স্টেশনে’র উদ্দেশ্যে।

 

     পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে ওরা দেখল অবাক কান্ড! সেখানে বসে আছে টুনটুনির মা চিন্তিত মুখে। আসলে বাসায় ফিরে টুনটুনিকে দেখতে না পেয়ে চারপাশ খুঁজে একটুও সময় নষ্ট না করে সে পুলিশের কাছে ডাইরি লেখাতে এসেছে।

     মাকে দেখতে পেয়ে টুনটুনি আর থাকতে পারল না। ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে চেপে পড়ল। মা’ও তাকে কোলে নিয়ে অনেক আদর করল।

    বুলবুলির চোখে জল এসে গেল আনন্দে। বুলবুলির মা নিশ্চিন্ত হলো।

   এরপর টুনটুনি বুলবুলির মুখে সবাই আসল ঘটনা শুনল। দুই মায়ের আলাপ-বন্ধুত্ব হল। কথায় কথায় জানা গেল, টুনটুনিদের বাসার খুব কাছেই বুলবুলিরা থাকে। কিন্তু দিক ভুল হয়ে যাওয়াতে টুনটুনি চিনতে পারেনি।

      সব শেষে পাখি পুলিশ বলল, “শোনো, টুনটুনি-বুলবুলি, তোমরা এখন বড়ো হচ্ছো। তাই তোমাদের বাসার ঠিকানা মুখস্ত রাখা উচিত। তাতে কী হবে জানো তো? যেখানেই যাও-না-কেন, এমনকী যদি হারিয়েও যাও, ঠিক বাসাতে ফিরতে পারবে। বুঝলে তো?”

    বুলবুলি ও টুনটুনি মনের আনন্দে ললিপপ চুষতে চুষতে বলল, “মনে থাকবে।”


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up